স্পেনে বৈধভাবে বসবাসের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে, যা বিশেষ করে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য সুসংবাদ। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, "Arraigo Social" প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র দুই বছরের বসবাসের পর বৈধতা অর্জন করা সম্ভব।
স্পেনে বৈধ হওয়ার সম্পূর্ণ গাইড (২০২৫ আপডেট)
স্পেন ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ যেখানে হাজার হাজার অভিবাসী বৈধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। যদি আপনি স্পেনে অবৈধভাবে বসবাস করে থাকেন এবং বৈধতা পেতে চান, তবে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। স্পেনে বৈধ হওয়ার জন্য মূলত তিনটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে:
- Arraigo Social (সামাজিক শিকড়) – ২ বছরের নিয়ম
- Arraigo Laboral (কর্মসংস্থান ভিত্তিক) – ৬ মাস কাজ করলে
- Arraigo Familiar (পরিবার ভিত্তিক) – পরিবারের মাধ্যমে
এছাড়াও, সেল্ফ-এমপ্লয়মেন্ট (Autónomo), কাজের রেসিডেন্সি পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসা থেকে ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদির মাধ্যমে বৈধ হওয়া সম্ভব।
১. Arraigo Social (সামাজিক শিকড়) – সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়
এই নিয়মের মাধ্যমে স্পেনে মাত্র ২ বছর থাকার পর বৈধ হওয়া যায়।
যা যা লাগবে:
✔ স্পেনে ২ বছর অবৈধভাবে বসবাসের প্রমাণ
✔ ৬ মাসের বৈধ কাজের প্রমাণ (বিদালাবেরাল)
✔ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (বাংলাদেশ থেকে)
✔ স্থানীয় সিটি হল থেকে পাদ্রোন সার্টিফিকেট (Padronamiento)
✔ একটি ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করতে হবে
Arraigo Social এ কিভাবে আবেদন করবেন?
✅ প্রথম ধাপ: আপনার Padron (সিটি হলের বাসিন্দা প্রমাণপত্র) আপডেট করতে হবে।
✅ দ্বিতীয় ধাপ: ৬ মাসের কাজের প্রমাণ (যদি থাকে) অথবা স্বতন্ত্র কাজের পরিকল্পনা (Autónomo) তৈরি করুন।
✅ তৃতীয় ধাপ: পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন।
✅ চতুর্থ ধাপ: স্পেনের অভিবাসন অফিসে আবেদন করুন (Extranjería)।
⏳ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে গড়ে ৩-৬ মাস সময় লাগতে পারে।
২. Arraigo Laboral (কর্মসংস্থান ভিত্তিক) – কাজের মাধ্যমে বৈধতা
যদি আপনি স্পেনে ২ বছর অবস্থান করেন এবং অন্তত ৬ মাস কাজ করেছেন, তাহলে আপনি Arraigo Laboral এর মাধ্যমে বৈধতা পেতে পারেন।
✔ শর্তাবলী:
- স্পেনে কমপক্ষে ২ বছর অবস্থান করতে হবে।
- ৬ মাসের কাজের প্রমাণ (Contratos de trabajo বা Vida Laboral)।
- নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চুক্তিপত্র।
💡 এই নিয়মের সুবিধা:
- দ্রুত রেসিডেন্স কার্ড পাওয়া যায়।
- স্পেনের বিভিন্ন সেক্টরে (রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ কাজ, কৃষি খামার) কাজ করলে সহজেই বৈধ হওয়া যায়।
৩. Arraigo Familiar (পরিবার ভিত্তিক) – পরিবারের মাধ্যমে বৈধতা
যদি আপনার স্পেনে বসবাসরত স্বামী/স্ত্রী, সন্তান বা বাবা-মা থাকেন, তাহলে তাদের মাধ্যমে আপনি সহজেই বৈধ হতে পারেন।
✔ যা লাগবে:
- পরিবার সদস্যের স্পেনের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের কার্ড থাকতে হবে।
- সম্পর্কের প্রমাণ (বিবাহ সনদ, জন্ম সনদ)।
💡 এই নিয়মের সুবিধা:
- কাজের প্রমাণ লাগবে না।
- দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
৪. Autónomo (সেলফ-এমপ্লয়মেন্ট) – ব্যবসার মাধ্যমে বৈধতা
যদি কেউ ব্যবসা চালু করতে চান, তাহলে তারা Autónomo ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
✔ যা লাগবে:
- ব্যবসার পরিকল্পনা (Business Plan)।
- পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সাপোর্ট (ব্যাংক স্টেটমেন্ট)।
- Autónomo ট্যাক্স নম্বর (NIE & Hacienda Registration)।
💡 এই নিয়মের সুবিধা:
- নিজের ইচ্ছামতো ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।
- অন্য কাউকে নির্ভর করতে হয় না।
৫. চাকরির মাধ্যমে স্পেনে বৈধ হওয়া (Work Permit বা Tarjeta de Residencia y Trabajo)
যদি কোনো কোম্পানি আপনাকে চাকরির অফার দেয়, তাহলে তারা স্পেনের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আপনার জন্য ওয়ার্ক পারমিট করতে পারে।
✔ যা লাগবে:
- বৈধ নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চাকরির অফার
- নিয়োগ চুক্তি (Contrato de Trabajo)
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (পাসপোর্ট, NIE ইত্যাদি)
⏳ প্রক্রিয়ার সময়: ৩-৬ মাস।
স্পেনে বৈধ হওয়ার পর কী কী সুবিধা পাবেন?
✔ বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন।
✔ পরিবারকে স্পেনে আনতে পারবেন।
✔ সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পাবেন।
✔ স্পেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন (১০ বছর পর)।
কত খরচ লাগবে?
স্পেনে বৈধ হওয়ার জন্য সরকারি ফি খুব বেশি নয়।
📌 Arraigo Social বা Laboral আবেদন ফি: প্রায় ৩৮€ - ৪০০€
📌 পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র: ৫০€ - ১০০€
📌 সরাসরি আবেদন করলে খরচ কম, তবে ল’ইয়ার নিলে ১০০০€ পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
শেষ কথা
স্পেনে বৈধ হওয়ার জন্য Arraigo Social বর্তমানে সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় উপায়। ২ বছর থাকার পর কাজের প্রমাণ থাকলে সহজেই বৈধ হওয়া সম্ভব। তবে যারা নতুন আসছেন, তারা অন্য ভিসার মাধ্যমে আসার চেষ্টা করুন, কারণ অবৈধভাবে থাকা সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ।
📌 আরো জানতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন:
Post a Comment